রহস্য কেন রহস্যময়
কোনভাবেই
যেন আর হাঁটতে পারছে
না হারু। 111টি
তালি দেওয়া প্যান্ট আর
11টি জোড়া দেওয়া শার্টটা
ভিজে কম করে হলেও
101 কেজি ওজন হবে।
এ বিশাল ওজন সে
আর বয়ে বেড়াতে পারছে
না। তবু
তার পথ চলা বন্ধ
করার কোন উপায় নেই। শ্রাবন
ধারার বিরামহীনতার মাঝেই সে হেঁটে
চলেছে। হাঁটছে
বললে ভুল হবে।
জ্বালানি শেষ হলে হঠাৎ
করে গাড়ি যেমন তার
পথ চলা থামাতে পারে
না অনেকটা তেমনভাবেই সে
চলছে। অবশেষে
অন্ধকার গলি পথটা কোন
রকমে পার হয়ে চিৎ
হয়ে শুয়ে পড়ল।
চোখের পাতা মুদে এল। একি
আশ্চর্য কথা! বন্ধ চোখেই
হারু দেখতে পাচ্ছে! দেখছে
লক্ষ কোটি আলোক বর্ণালী। সে
ভাবতে থাকে- এটা কীভাবে
সম্ভব!! এতকাল শুনে এলাম
বর্ণালী মোট সাতটা- “বেণীআসহকলা”-র মত সাজানো
থাকে। তাহলে
বাকীগুলো কোথা থেকে এল!......একটা বিশাল শূণ্যতায়
আচ্ছন্ন হয়ে গেছে হারুর
মস্তিষ্কটা।
কী
খবর হারু? কী ভাবছো?
হকিংসের প্রশ্নে চমকে উঠে হারু।
আপনি
হকিংস না?
হ্যাঁ।
আপনি
আবার কথা বলা শুরু
করলেন কবে থেকে?
এইতো
গতকাল 11টা 111 মিনিট থেকে।
কী
সব আবোল তাবোল বলছেন?
111 মিনিট আবার হয় কেমন
করে?
হয়
।এ জগতে
সবই হয়। সবকিছুর
উত্তর সবাই পায় না
অথবা পেতে চেষ্টা করে
না অথবা সঠিক পথে
চেষ্টা করে না।যেমন ধর আমি
জানি না আমার বউটা
আমাকে ছেড়ে চলে গেল
কেন? ছেড়ে যাবেই যদি
তবে আমাকে বিয়েই বা করল
কেন? বড় একা একা
লাগছে আমার। কেরানী
আইনস্টাইন নাকি আমার চেয়ে
বড় বিজ্ঞানী! আরে কালের সংক্ষিপ্ত
ইতিহাস লিখলাম আমি আর
বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব।
আমাকে লোকে এখনও সর্বকালের
শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলো
না! হায়রে বিচিত্র এ
প্রাণিকূল! তার চেয়েও বিচিত্র
আশরাফুল…. !
আপনি
তো দেখছি মহা বোকা!
কেন
আমি বোকা হব কেন?
বোকা
না হলে আপনি অনেক
আগে থেকেই বুঝতে পারতেন-
ফুল মানে তো বোকা।
দূর
কী সব বলছো? ওটাতো
আরবী শব্দ! এর অর্থ
ইংরেজিতে করব
কেন?
আপনার
নামের অর্থ জানেন?
জানি-
sport of hunting with hawk
এইতো
ভুল জানেন দেখেই তো
আপনাকে বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব
থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। আর
আপনার স্ত্রী আপনাকে ছেড়ে
চলে গিয়েছেন।
তুমি
জান?
অবশ্যই
জানি- আপনার নামের অর্থ
হক পাখির রাজা।
এটা
আবার কীভাবে হয়?
হয়। আপনার
বাবা আপনার নাম রেখেছেন-
Hawk king ভুলে একটা k কম দিয়ে
ফেলেছেন। আর
তাই আপনার নাম হয়ে
গিয়েছে Hawking। আর
আইনস্টাইনের বাবাও একটা ভুল
করেছেন। তার
নাম রেখেছেন আইনস্টাইল। ভুলে
‘ল’ এর স্থলে ‘ন’
হয়ে গিয়েছে দেখে তাকেও
18 বছর পর্যন্ত বোকা থাকতে হয়েছে
এবং কেরানীর চাকরি নিতে হয়েছে। তার
বুদ্ধি আপনার চেয়ে একটু
বেশি ছিল বলে সে
চাকরি এবং গবেষণা দুটোই
এক সঙ্গে করে কিছুটা
সফল হয়েছে।
কিছুটা
সফল হয়েছে বলছো কেন?
তিনিতো
জানতেন না আলো(ফোটন
কণা)-র বেগের চেয়ে
বেশি বেগের কোন কণা
আছে।যদি
জানতেন তাহলে E=m
সূত্রটি অবশ্যই দিতেন না।তাই
তিনি কিছুটা সফল।
কী
বলছো? নামের সাথে কর্মের
কী সম্পর্ক?
আছে
আছে। আগে
বলুন অপনি
এখানে এলেন কীভাবে? আপনি তো দেখছি সেই ঐতিহাসিক চেয়ারে বসে বসে কথা বলছেন! বৃষ্টির
পানি অপনার গায়ে লাগছে না কেন?
শুন
হারু, এ সবকিছুকেই আমরা মিরাকল মনে করি। আসলে এ জগতে কারণ ছাড়া কিছুই ঘটে না। প্রতিটি
কারণের আবার আছে লজিক টেবিল।ঐ লজিক টেবিল দেখলে সব কিছুই স্বচ্ছ হযে যাবে। পৃথিবীর
প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে ধরা হয় থেলিসকে।তিনি বিশ্বাস করতেন মৌলিক পদার্থ মাত্র তিনটি:
মাটি, বায়ু ও পানি।
সে
যুগের সকল মানুষই তার এ কথা বিশ্বাস করত।প্রকৃতি জগতের রহস্য উদঘাটনে মানুষ অবিরত চেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছে।এ যুগে থেলিসের তত্ত্ব অচল।নিউটন, আইনস্টাইন এখনও সচল। এক সময় আসবে যখন
এরা সবাই অচল হয়ে যাবে।নিউটন, আইনস্টাইন ও হকিংসকে নিয়ে মানুষ হাসবে ঠিক থেলিসের অনেক
কথাই নিয়েই যেমন আমরা হাসি।
কোন
কখা?
এই
যে ধর- গাছ মাটি খায়।
আপনি
তো আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নি!
তোমাদের
বাঙালিদের এটাই সমস্যা।একটা বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেf।
আপনার
কথার যৌক্তিক প্রমাণ দেন তো দেখি?
ধরা
যাক, তোমাদের মেয়েরা আযান হলে মাথায় কাপড় দেয়। যে মেয়ে জীবনে এক ওয়াক্ত নামাজও পড়েনি
সেও আজানের সময় এটা করে। আবার তোমাদের যে সব মেয়ে চালচলন হলিউড বা বলি্উডের নায়িকাদের
মত তারাও বুকের ওড়নাটা টেনে মাথায় তুলে দেয়।
দেখুন
হকিং সাহেব আমি বিজ্ঞানী হিসেবে আপনাকে শ্রদ্ধা করি। সে সুযোগে আপনি আমাদের জাতিসত্ত্বার
উপর নিলর্জ্জ আঘাত হানছেন।এটা মেনে নেয়া যায় না।
আপনাদের
মেয়েদের অবস্থা কী তার চেয়ে উন্নত? তারা কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের চেয়েও বেশি রক্ষণশীল।
যেমন- আপনাদের কোন মেয়েকে মসজিদে যেতে দেখা যায় না। আমাদের মেয়েরা মসজিদে ঠিকমত না
গেলেও পুজোর সময় মন্দিরে যায়, বড়দিনে গীর্জায় যায়।ওয়ানগালা্ অনুষ্ঠানে যায়।অবশ্যই আমাদের
মেয়েরা এক্ষেত্রে অনেক বেশি উদার।
আরে
বোকা নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে অন্যের সংস্কৃতি ধারণ করেছো বলেইতো তোমাদের এ অধপতন! ওয়ানগালার
কথা বললে। গারোদের প্রায় সবাই এখন খ্রীষ্টান। তবুও তারা তাদের সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে
ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তোমরা মুসলমানরা কত বড় বোকা! তোমাদের সাথে ধোকাবাজি করে
আমরা তোমাদের পুড়িয়ে মারলাম যে দিন সে আমরা এপ্রিল ফুল পালন করি। অথচ তোমরাও দিব্যি
তোমাদেরকে পুড়িয়ে মারার এ আনন্দ উপভোগ কর!
আপনি
আবার ধর্মে বিশ্বাস করেন নাকি?
বৈজ্ঞানিক
যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া আমি কিছুই বিশ্বাস করি না। কিন্তু যেখানে যুক্তি দিয়ে রহস্য
উদঘাটন করা যায় না সেখানে মনের অজান্তে একটা বিশ্বাসের জন্ম হয়। এ বিশ্বাসের পিছনে
প্রথম দিকে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। একে বলে হাইপোথিসিস। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে
হাইপোথিসিস বাস্তব ও যুক্তিযুক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়ায়। আর আমি যেটা বললাম সেটা আমাদের
সংস্কৃতির কথা বললাম। দেখ তোমাদের অন্ধ বিশ্বাসের খোঁড়া যুক্তির উপর ভর দিয়ে চললে আমরা
খুব কমেই এগুতে পারতাম। আমাদের ধ্যান ধারণা ও চাহিদার সংজ্ঞা আর তোমাদের ধ্যান ধারণা
ও চাহিদার সংজ্ঞা এক নয়। এগুলো অনেক সময় সাপেক্ষ ও যুক্তি পাল্টা যুক্তির ব্যাপার।কখনও
সময় সুযোগ হলে তোমার সাথে এ বিষয় নিয়ে আলাপ হবে। আমাকে এখন যেতে হবে। এই মাত্র খবর
পেলাম মঙ্গলের মাটিতে কিউরিসিটিতে একটা বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীরা এটার
সমাধান করার চেষ্টা করছে। তারা সমাধান করতে না পারলে আমার স্মরণাপন্ন হতে পারে।
অনেক
অনেক প্রশ্ন হারুর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না সে। এটা কীভাবে হল? ওটা
কীভাবে হল? ……………… হকিংস সাহেব ঠিকই বলেছেন বলে একবার মনে হলেও আরেক বার তা সে মেনে
নিতে পারছে না।সে ভাবছে আমরা জাতিটার স্বকীয়তা কী? আমরা কী চাই আর কিসে আমরা খুশি হই!.............আসলে
আমরা জাতি হিসেবে বড়েই বিচিত্র। বিচিত্র আমাদের মানসিকতা। সাড়ে তিন বছরের মাথায় যে
জাতি জাতির পিতাকে হত্যা করল। একটা মানুষ পাওয়া গেল না কান্নাকাটি করার জন্য! বহুদলীয়
গনতন্ত্রের প্রবর্তনকারী জিয়াকে হত্যার পর তারাই কাঁদল অঝোর ধারায়। তারাই সাত্তারকে
হটিয়ে এরশাদ শাহীকে ক্ষমতায় আনল। তারাই আবার স্বৈরাচার বলে তাকে হটিয়ে দিল। খালেদা
হাসিনা শুধু পালা বদল করেই চলছে। পরিবর্তনের ডাক দিয়ে সেনা সমর্থিত সরকার দু’বছরের
বেশি টিকতে পারল না। যে পাগলা ঘোড়ায় চড়েছিল তারা সে ঘোড়া তাদেরকে পঙ্গু করে ফেলে দিল।………………..
বৃষ্টির
অঝোর ধারা বয়েই চলেছে। হারুর নাকের ডগায় জলকণা অবিরাম জমছে আর ঝরে পড়ছে।রাজপথে পাড়িগুলোর
হর্ণ বাজানো কমে এসেছে। মাঝে মাঝে বর্ণিল আলোকচ্ছটা দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় দু’একটা রিকসার
টুন টুন শব্দ শোনা যাচ্ছে। হিমশীতল শরীর মাঝে মাঝে মস্তিষ্কে এলার্ম বাজাচ্ছে। চোখ
খুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করেও সে খুলতে পারল না। হাত পাগুলো নাড়াতে গিয়ে কোন বোধ পেল না।
ধমনী ও শিরাগুলো ঠিক মতো কাজ করছে না। হারু নিশ্চিত হল সে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যেতে
চলেছে। মৃত্যু নিয়ে হারুর কোন ভয় নেই। কারণ সকলকেই একদিন মরতে হবে। কিন্তু এভাবে জনমানবহীন
রাজপথে তাকে চির বিদায় নিতে হবে তা কোনদিনই তার ভাবনায় ছিল না। হারু স্বাভাবিক হতে
চেষ্টা করে। গায়ে চিমটি কেটে বোধশক্তি বুঝার চেষ্টা করে।অবশেষে নড়ে চড়ে স্বগোত উক্তি
করে- দূর এসব উল্টা পাল্টা কী ভাবছি আমি। আমার না এটা এক্সটেনশন লাইফ! আমি তো
10110 বছর আগে মারা গিয়েছিলাম! সেদিন আমার উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল! 11
দিন পর আমার জ্ঞান ফিরে এলে তাকিয়ে দেখি এক অপরূপ রূপসী আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে!
আপনি
কে? আমিই বা এখানে কেন?
রূপসী
মৃদু হাসছে। কোন উত্তর দিচ্ছে না।
এটা
কী হাসপাতাল? আপনি কী নার্স?
নিরুত্তর
ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে সে।উত্তেজনায় তখন আমার শরীরে কাঁপন ধরেছে।বেগতিক অবস্থা
দেখে একটা নার্স এগিয়ে এসে বলল এই ডাক্তার আপাইতো আপনার অপারেশন করেছেন। পলকহীন নয়নে
আমি তখন তার দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। তারপর হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম-
কে
বলেছে আপনাকে আমার অপারেশন করতে? কেন আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন? কোন উত্তর না দিয়ে রূপসী
তখনও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলেছেন। ততক্ষণে সব সিনিয়র ডাক্তাররা আমার চারপাশ ঘিরে
ধরেছে। সবাই একযোগে বার বার জিজ্ঞেস করছে কী হয়েছে ডাক্তার নীলা?
নীলা
তখনও নিরুত্তর।নার্স কী যেন ইঙ্গিত করল। অন্য একজন ডাক্তার একটি সিরিঞ্জ ডাক্তার নীলার
দিকে এগিয়ে দিল। ডাক্তার নীলা তার মোলায়েম হাতে আমার বাহুতে সুঁই ঢুকিয়ে দিল। আমি এক
দৃষ্টিতে নীলার মায়াবী চেহারার পানে ফ্যাল ফ্যালিয়ে তাকিয়ে রইলাম।11 দিন পর ডাক্তার
নীলার সাথে আমার পরিচয় হল কথা হল একান্তে। ইন্টার্ণিশীপ করছিল।শেষ হতে মাত্র 11 মাস
বাকি। অত্যন্ত গরীব ঘরের মেয়ে। একজন ধনীর করুনায় ডাক্তারী পড়া হয়েছে তার।
হাসপাতালের
32 নং ওয়ার্ডে প্রতিদিন আমার প্রচুর বন্ধু বান্ধবের সমাগম হত। আমাকে দেখার আগ্রহ যতটা
না তাদের ছিল তার চেয়ে বেশি মোহ ছিল ডাক্তার নীলাকে দেখার।যতদিন হাসপাতালে ছিলাম প্রতিদিনই
ডাক্তার নীলা আমাকে দেখে যেতেন। আর প্রতিবারই তার সাথে কথা হত। কীভাবে কী হল? কেন ট্রাক
উঠে গিয়েছিল? কেন উঠানো হয়েছিল? ইত্যাকার নানা প্রশ্ন বাণে সে আমাকে ক্ষত বিক্ষত করত?
বিদায়ে সময় শুধু বললো একটা অনুরোধ করব। রাখবেন কীনা বলেন? আমি বললাম রাখতে পারবো কিনা
জানিনা তবে চেষ্টা করব।বলুন।কী অনুরোধ সে চিন্তায় আমার নিউরণগুলো আবার উত্তেজিত হয়ে
উঠল।কোনরকমে নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। তার অনুরোধ ছিল- জান বাজি রেখে যেন আর কোন দিন দেশ
বা দেশের মানুষের উপকার করতে না যাই। কেননা এটা আমার এক্সটেনশন লাইফ।তার সে কথা আমি
রাখতে পারিনি।
হাসপাতালে
আমার পাশের বেডে আর একজন ত্রিশোর্ধ রুগী এসেছিল। তার সাথে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিল আমার।
ডাক্তার নীলা যখনই রাউন্ডে আসতেন তখনই তিনি দেখতেন সেই রুগিনী তার খাবার আমাকে খুব
আদর সোহাগ করে খাওয়াচ্ছেন।নাম তার পরী। পরী নাম হলেও দেখতে সে একেবারেই কুৎসিত চেহারার
মেয়ে ছিল। কোন যুবক তার দিকে দ্বিতীয়বার তাকাবে কীনা সস্দেহ আছে।ডাক্তার নীলা বলতেন-হাসপাতালে
এলে ভালবাসা প্রগাঢ় হয়। সৃস্টিকর্তাকেও বেশি বেশি মনে পড়ে। হাসপাতাল ছাড়ার দিন পরী
আমার ঠিকাণাটা চেয়ে নিয়েছিল।সে ঠিকাণায় চিঠিও লিখেছিল দুটো। এ সব চিঠির উত্তরও আমি
দিয়েছিলাম। দাদা বলে আমায় সম্বোধন করত। ধর্ম কী জানতাম না। চিঠি পাবার পর বুঝলাম সে
ছিল কনভার্টেটেড মুসলিম। স্বামী ছিল এক ইনডাট্রিয়ালিস্ট।স্বামী তাকে প্রচুর টাকা পয়সা
গয়না পত্র দিয়ে ডুবিয়ে রাখত।ভালবাসাও দিত। কিন্তু সময় দিতে পারত না। অথচ সব সময় মধ্য
যুগীয় কায়দায় আলগে রাখতে চাইত।
এ সব স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে হারুর শরীরটা নিস্তেজ
হয়ে গেল।
চোখ
খুলে প্রথম মূহুর্তেই বিষ্ময়ে অবাক হারু! কী যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশে শুয়ে আছে সে!
দ্বিতীয় বিষ্ময়ের বিষয় হল এখানে সে এল কীভাবে! তৃতীয় বিস্ময়ের বিষয় হল এত সুন্দর জগতও
হতে পারে! আমি কী সত্যি মরে গেছি? দূর ছাই। মরলে আবার মানুষ জীবিত হয় কীভাবে? চারিদিকে
হাজারো বর্ণিল আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে আছে। সবকিছু এতই অপরূপ যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে
না।
বিশাল
একটি কক্ষে শুয়ে একা নি:সঙ্গ হারু।এটা কী কোন আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্র? তাও বা
হয় কীভাবে? আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রগুলো হয় বড়ই সুরক্ষিত।থাকে নিছিদ্র নিরাপত্তা
ব্যবস্থা। বাহির থেকে ভেতরের জগত আর ভেতর থেকে বাহিরের জগত দেখা যায় না।কিন্তু হারুতো
সবই দেখতে পাচ্ছে। বিছানা, খাবার, জিনিসপত্র আকাশ বাহিরের পরিবেশ সব কিছু অদ্ভুত দেখা
যাচ্ছে। কিন্তু ছোঁয়া যাচ্ছে না।দেখে মনে হয় সবই মোলায়েম জিনিসপত্র। দেখি ধরে দেখা
যাক বলে হাত বাড়িয়ে দিতেই জিনিস অদ্ভূতভাবে গায়েব হয়ে যাচ্ছে।প্রচন্ড পিপাসায় হারু
পানি পান করতে চাইল।পানির গ্লাসটা সাইড টেবিলেই ছিল। কিন্তু সে ধরতে পারছে না।তেস্টায়
তার জীব শুকিয়ে গেছে। কন্ঠ জড়তায় ভরে গেছে।।কথা বলতে চেষ্টা করছে কিন্তু কোনভাবেই পারছে
না। এরকম শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আগেও একবার সে পড়েছিল।কিন্তু প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ ছিল
ভিন্ন।জগত ও জগতের উপাদান সবই ছিল পরিচিত।আর আজ যা দেখছে তা সে জীবনে দেখারতো দূরের
কথা কল্পনার ডানা মেলেও ভাবতে পারে নি।ডানদিকে তাকিয়ে দেখল বৃক্ষঘর। সেখানে বৃক্ষগুলোও
যেন বন্দি। বড় হচ্ছে ডান পালা গজাচ্ছে। কিন্তু চারদিকের বেড়াজাল ভেদ করতে পারছে না।বৃক্ষঘরেই
দেখা যাচ্ছে নানান জাতের পাখি। পাখিগুলোও মুক্ত আকাশে বিচরণ করতে পারছে না। সেই বৃক্ষঘরেই
সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। বামদিকে তাকাতেই হারু আরেক অবাক বিষ্ময়ের সম্মুখীন হল। বড় বড়
এভিনিউ দেখা যাচ্ছে। আরও দূরে হাইওয়ে মনে হচ্ছে। গাড়িগুলো সব অদ্ভূত ধরনের। এক একটি
স্বচ্ছ হীরার টুকরার মত বর্ণালী ছড়াচ্ছে। হীরার টুকরা বললে ভুল হবে। বলা যায় ইউরেনিয়ামের
টুকরো যার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব পাবার জন্য এ জগতের সভ্য দেশগুলো উদগ্রীব।উত্তর দিকে তাকাতেই
দেখল হিটলার, মুসোলীনীর সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিশ্বের 192টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।
সবাই রেসিং কারের স্টিয়ারিং ধরে বসা।ধারাভাষ্যকার প্রতি মূহুর্তের উত্তেজনাকর পরিস্তিতির
বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছে। টিভি ও স্যাটেলাইট ক্যামরাগুলো অনবরত ক্লিক ক্লিক করে চলেছে। প্রতিযোগিতায়
এক এক বার এক এক রকম অবস্থা তৈরি হচ্ছে। হারু অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখল প্রত্যেক দেশের
একটি করে মাত্র গাড়ি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের প্রতিযোগির চারপাশে
140টির মত গাড়ি একটি গাড়ি বহর হয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার
কারণে অন্য কারগুলো বার বারই আমাদের গাড়ি বহরকে ক্রস করতে বেগ পাচ্ছে।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment