Monday, August 27, 2012

Didactics of Mathematics in Elementary Education: In search of new approach কার্যকর প্রাথমিক গণিত শিক্ষণ পদ্ধতি (নতুন অ্যাপ্রোচের সন্ধানে) - মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম


কার্যকর প্রাথমিক গণিত শিক্ষণ পদ্ধতি (নতুন অ্যাপ্রোচের সন্ধানে)  - মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম

ভূমিকা:
জ্ঞান অর্জনের পূর্ব শর্তই হচ্ছে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করা।এর জন্য একটি মান সন্মত কর্ম পরিকল্পনা থাকা দরকার। দরকার ধারাবাহিক নিরবচ্ছিন্ন গবেণাধর্মী প্রচেষ্টা। জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ যদিও ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয় তবুও এর ক্ষেত্র  তৈরি করার দায়িত্ব বর্তায় পূর্বসূরিদের উপর।বলা যায় বিষয় বিশেষজ্ঞদের এক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা থাকতে হয়। এর ফলে পরবর্তী জেনাশেনের জন্য একটি উচ্চমানের দিক নির্দেশনামূলক জাতীয় শিক্ষা পরিকল্পনা তৈরি করা সহজ হয়।বাংলাদেশে গণিত সমিতি গণিত সমাজের দর্পন হিসেবে গণিত শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখবে এ প্রত্যাশা বাংলাদেশের গণিত সচেতন সকলের একান্ত কামনা।    
ধারাবাহিক ও পরিকল্পিতভাবে গাণিতিক জ্ঞানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে না পারলে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রারম্ভিক বয়সেই গণিত সম্পর্কে একটি ভীতি সঞ্চার হবার সম্ভাবনা থাকে।একবার যদি সে ভীতি সঞ্চারিত হয় তবে তাকে আর গণিত বিষয় আগ্রহী করে তোলা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।সে জন্য প্রাথমিক স্তরেই শিক্ষার্থীদের মাঝে গণিতকে বাস্তবতার নিরিখে আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে।এ কাজটি আমাদের দেশের শিক্ষাক্রমে সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে এ কথা বলার সময় এখনও হয় নি। যদিও নি:সন্দেহে আমাদের বর্তমান প্রাথমিক গণিতের শিক্ষাক্রম পূর্বের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ। তবুও এ ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন সাধন করা অত্যাবশ্যক। শিক্ষাক্রমের আওতাভূক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষণবিদ্যা বা পেডাগজি। পেডাগজি (Padagogy) হচ্ছে শিক্ষকের শিক্ষকের শিক্ষাদানের কলাকৗশল বা শিক্ষন বিজ্ঞান । ইহা  একটি আধুনিক শিক্ষণ বা শিখন প্রক্রিয়া। পেডাগজি শব্দটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ (Paidagogos) থেকে এসেছে।ক্রীতদাস শিশুদের যে কাজে নিয়োগ করা হতো সে কাজের শিক্ষামূলক তদারকি যে করত তাকে বলা হতো পেইডাগোগজ (Paidagogos)। এর কাজ ছিল ড্রিল সার্জনের মতো। শিশুদের মনিব রুটিন মাফিক কাজ তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিতেন। সে অনুযায়ী শিশুরা কাজ করছে কিনা তা তাকে নিশ্চিত করতে হতো। পেইডিয়া( Paidia) শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে শিশু। সে কারণে পেডাগজি (Padagogy) বলতে শিশুদের শিক্ষা এবং এন্ড্রাগজি (Education) বলতে বয়স্কদের শিক্ষাকে বুঝানো হয়।কখনও কখনও ইহা দ্বারা শিক্ষণ কৌশলকেও বুঝানো হয়ে থাকে।   

আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে গণিত শিক্ষণের বতর্মান চিত্র:
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রচলিত গণিত শিক্ষণ পদ্ধতি একটা শক্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে এ কথা বলার সুযোগ কম। না বুঝে অনেকটা মুখস্থবিদ্যার উপর নির্ভর করে আমরা যে গাণিতিক জ্ঞানগুলো অর্জন করছি সেগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর আমাদের মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।ছোটবেলায় নতুন জ্ঞান আহরণ করতে গিয়ে যে সকল প্রশ্ন আমাদের মনে এসেছিল সেগুলোর অধিকাংশেরই উত্তর আমাদের শিক্ষক বা গুরুজন দিতে ব্যর্থ হয়ে বলেছিলেন-এটা ধরে নিতে হবে।আমরাও সেভাবে শিখে এসেছি। এতে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন হয়েছে বলার অবকাশ কম। যেমন- অনেক ছোটবেলায় আমরা শিখেছি 2+3 = 3+ 2 কিন্তু এর কারণ কী তা আমরা কখনও খতিয়ে দেখিনি। অর্থাৎ আমরা বিশ্লেষণাত্মকভাবে(alytically) গণিত না শিথে শুধুমাত্র যান্ত্রিকভাবে (mechanicall) গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধানে সচেষ্ট হয়েছি।এতে অভিজ্ঞতাভিত্তিক স্থায়ী জ্ঞান অর্জিত হয় নি। তদুপরি শ্রেণিকক্ষে যখন আমরা প্রথম গাণিতিক ধারণাগুলো অর্জন করতে যাই তখন শিক্ষক প্রথমেই কোন সমস্যা কীভাবে সমাধান করতে হবে তার নিয়ম বলে দিয়েছেন। আমরা নিয়মগুলো শুধু রপ্ত করে সমস্যা সমাধান করেছি। আমাদের নিজেদের উদ্যোগে সমস্যা সমাধানের সুযোগ খুব একটা আমরা পাই নি। ফলে সমস্যা সমাধানে আমাদের মস্তিষ্ককে কাজে লাগানোর খুব একটা প্রয়োজনও হয় নি।এর ফলে নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রবৃত্তি ধীরে ধীরে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়েছে বলা যায়। এভাবে আমরা যন্ত্র নির্ভর পদ্ধতির সাহায্যে পাঠ আয়ত্ত করে করে শিক্ষক নির্ভর হয়ে পড়েছি।এতে জ্ঞান চর্চার গভীরতায় আমরা বেশি দূর যেতে পারি নি। আমাদের শিক্ষণ পদ্ধতির পুরাতন এ পদ্ধতিটি জ্ঞান সঞ্চালনধর্মী তত্ত্ব (Transfer of Learning)দ্বারা প্রভিাবিত ছিল। আমাদের দেশে শিক্ষণ পদ্ধতির উন্নয়নের ধারায় পরবর্তীতে অনেক উন্নয়ন প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাও সুসংহত ও সুবিন্যস্তভাবে হয়েছে বলার সুযোগ কম। ইদানিংকালে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করে আমরা মুখস্থবিদ্যার প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে চিন্তার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করার চেষ্টা করলেও যতটুকু তাত্ত্বিকভাবে বা প্রক্রিয়াগতভাবে এগিয়েছি প্রায়োগিকভাবে ততটা সুসংহত হতে পারি নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক সৃষ্টি বা শিক্ষা উপকরণ তৈরি করার পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কার সাধিত হয় নি। অর্থাৎ আমরা শিক্ষা পদ্ধতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি এ কথা নিদ্বিধায় বলার সময় এখনও আসে নি।উপরন্তু শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তনও সাফল্যজনকভাবে ঘটে নি। 
   
 শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ক্ষেত্র যেভাবে সম্প্রসারিত হয়:
শিক্ষার্থীদের জ্ঞান সম্প্রসারণের প্রকিয়াটিকে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া( Interaction)বা অবিরত জ্ঞান গঠন ও পুর্নগঠনের প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করে Vygotsky কে অভিজ্ঞতা গঠন ও পুন:গঠন প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করে  Vygotsky  AwfÁZv MVb I cyb:MVনের উত্তম ও যথার্থ প্রক্রিয়া বলে মতামত দিয়েছেন। তাঁর মতে প্রতিটি শিক্ষার্থী কিছু না কিছু জ্ঞান নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। তার এ পূর্ব জ্ঞানগুলো পরিবার ও সমাজ থেকে অভিজ্ঞতা গঠন ও পুন:গঠনের মাধ্যমে অর্জিত শেখা। প্রক্রিয়াটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাঁর মতে শিক্ষার্থীর জ্ঞান ‍ উন্নয়নের ক্ষেত্র বা জোন অব প্রক্সিমাল ডেভেলপমেন্ট অভিজ্ঞতার গঠন ও পুন:গঠনের চলমান প্রক্রিয়ায় প্রতি নিয়ত অভিযোজিত হয় এবং শিক্ষার্থী ক্রমান্বয়ে উন্নততর জ্ঞানের স্তরে প্রবেশ করে। শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় মূলত তার চেয়ে অধিকতর অভিজ্ঞদের সহায়তায়। হতে পারে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রক্রিয়া। বিদ্যালয় একটি সামাজিক আনুষ্ঠানি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানে তার শিখন চলে অনেকটা নিয়মবদ্ধ প্রক্রিয়ায় এবং শিক্ষকের সহায়তায়। শিক্ষকের কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীর আত্ম-শিখনের যোগ্যতা (Learning autonomy) তৈরি করা যাতে শিক্ষার্থী নিজে নিজে তার শিখন প্রক্রিয়াকে পরিচালিত করতে পারে। শিক্ষার্থীর পূর্র্ব অভিজ্ঞতা ও সর্বশেষ পুন: অভিযোজিত অভিজ্ঞতা(যা সে শিক্ষক বা অভিজ্ঞ ব্যাক্তি বা দক্ষ শিক্ষার্থীর সহায়তায় অর্জন করেছে)-এ দুয়ের পার্থক্যকেই Vygotsky জ্ঞান ‍উন্নয়নের ক্ষেত্র বা জোন অব প্রক্সিমাল ডেভেলপমেন্ট(zone of Proximal Development) বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জ্ঞান ‍ উন্নয়নের ক্ষেত্র( zone of Proximal Development) তার শিখনের বহুমূখী ও স্বতন্ত্র কেন্দ্রিয় বিন্দু(crucial point) নির্দিষ্ট করে। তাই তার শিখনের ধরণ আলাদা ও স্বতন্ত্র। সার্থক সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার উপর এ স্তরের উন্নয়ন নির্ভরশীল। অধিকতর অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের সহায়তায় শিক্ষার্থীর জ্ঞান ‍ উন্নয়নের ক্ষেত্র( zone of Proximal Development) সম্প্রসারিত হয়। Vygotsky সহায়তাকে অস্থায়ী গঠন কাঠামো(scaffolding)বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে শিক্ষক বা অধিকতর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী বা সমাজের অন্য যে কোন সদস্য সহায়তাকারী (scaffolder) হতে পারে।  তিনি নিচের চিত্রের মাধ্যমে ধারণাটির ক্রম উন্নয়ন ব্যাখ্যা করেছেন:       
zpd
ZPD-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন ক্ষমতায়ন চিত্র

উপর্যুক্ত চিত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে, শিক্থীকে সহায়তার মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং একটা পর্যায়ে সে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তার শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করার মত যথেষ্ঠ যোগ্যতা অর্জন করে। Vygotsky ছিলেন একজন বাশিয়ান মনোবিজ্ঞানী যার প্রধান কাজগুলো ছিল ধ্যান ধারণা ও ভাষা বিকাশের উপর। তাঁর মৌলিক উদ্ভাবন হল: জ্ঞান আত্মীকরণ (internalization) জ্ঞান ‍উন্নয়নের ক্ষেত্র(zone of proximal development). 1950 সালে তাঁর তত্ত্ব প্রথম প্রকাশিত হয়।

শিখনের পথে অন্তরায়সমূহ:
শিখনের বাধা হচ্ছে অনেকটা শিখনের মত জটিল একটি বিষয়। ইহা ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। এক বস্তুর সাথে অন্য বস্তুর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারা, বুঝার পদ্ধতি সঠিক না হওয়া, ভবিষ্যৎবাণী করতে পারা বা না পারা, যুক্তিযুক্ত কারণ বের করতে না পারা, ভুলে যাওয়ার স্বাভাবিক ধর্ম, যা ভাবা হয়নি এমন কোন পরিস্থিতি িএস পড়া ইত্যাদি কারণে শিখন বাধাসমূহ দেখা দিতে পারে।শিখনের এ সকল বাধা যদি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা না হয় তাহলে এগুলো এক সময় জটিল শিখন বাধা হিসেবে দেখা দিতে পারে। এজন্য প্রচুর পরিমাণে নতুন পরিস্থিতির প্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর মানসিক স্তরে উল্লেখিত বাধাসমূহ বড় হয়ে দেখা দিতে না পারে।শিক্ষার্থীর নতুন জ্ঞানরে অলোকে তাকে বেশি বেশি করে কাজ দিতে হবে যাতে তার শিখন স্থায়ী রূপ লাভ করে।একই বিষয় শিখাবার জন্য বার বার বিভিন্ন প্রকার কাজ দিতে হবে। একটি উদ্দেশ্যে পৌঁছার জন্য কাজের কৌশল অনেক রকম করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা বিরক্তি অনুভব করবে না অথবা কাজের আগ্রহ হারাবে না। সামাজিক মিথস্ক্রিয়ামূলক কাজ শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। তাই দলে কাজ করাকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি যে সকল শিক্ষার্থী অর্ন্তমূখী(introvert) তাদেরকেও চিন্তাধর্মী কাজ দিয়ে মনোযোগী রাখতে হবে।এজন্য কোন সমস্যাটি যথেষ্ট উচ্চমানের বা সঠিক সমস্যা তা আগে নির্ভুলভাবে নির্ণয় করতে হবে। জ্ঞানের একটি অংশ হচ্ছে শিক্ষার্থী ও তার পরিবেশের সাথে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফল। আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায়- শিক্ষার্থী ও তার পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে নতুন জ্ঞানের প্রতি যে অনুরাগ সৃষ্টি হয় তা তার প্রধান জ্ঞানের অংশ বিশেষ। তাই শিক্ষার্থীর অবস্থা পুরোপুরিভাবে বুঝা এবং তার আলোকে পদ্ধতি নির্বাচন ও ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।     
   
গণিত শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত:
শুধুমাত্র গণনা করতে বা অঙ্ক কষতে পারার ক্ষমতাই ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক জীবন পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়;  আমরা শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র কিছু নতুন অভিজ্ঞতা বা ধরাবাঁধা কিছু নিয়ম শিখিয়ে দিয়ে গণিতের পাঠ দান শেষ করেছি বলতে পারি না। গণিত সম্পর্কে কিছু মৌলিক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সুস্পষ্ট ধারণা প্রদানের জন্য একটি সমন্বিত রূপরেখা প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যক। যেমন- সমাজে গণিতের স্থান, শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনে গাণিতিক জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা, গণিতের কৃষ্টিমূলক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য সর্বোপরি এর বিশ্বজনীনতা। এ সব গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তোলার জন্য আমি মনে করি জ্ঞান অর্জনে শিক্ষার্থীদের অধিকতর ভূমিকা পালনের সুযোগ দান করা উচিত।
এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরই যুক্তিসংগত পন্থা এবং সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন হাতিয়ার বের করার জন্য সুযোগ দেওয়া উচিত। শিক্ষার্থী যাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে সে জন্য বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া উচিত।সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে তারা যে সব সমস্যার সম্মুখীন হবে সে সব সমস্যা যথার্থভাবে মোকাবিলা করার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে যথোপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। সমস্যা শব্দটি গণিতের পরিভাষায় নতুন বলার অবকাশ না থকলেও আমরা এটাকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে সচেষ্ট হবো।
বিভিন্ন ধরনের সামাজিক পরিবেশ থেকে বাস্তব সমস্যা তুলে এন তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা ও সমাধানের কৌশল কী কী হতে পারে সেটা ভাবার মত পরিবেশ তৈরি করে দিয়ে তাদেরকে স্ব স্ব উদ্যোগে সমস্যা সমাধান করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। সমস্যা সমাধানের কৌশল  এবং কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের যে সব বিষেয়ে দক্ষ করে তুলবে সেগুলো হল: সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করে ঐকান্তিকতার সাথে তা সমাধানের দক্ষতা অর্জন, স্বতন্ত্র ব্যক্তি সত্ত্বা সৃষ্টি করা, স্ব-উদ্যোগে কাজের সামর্থ্য অর্জন, পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন, সৃষ্টিশীলতার বিকাশ সাধন ইত্যাদি।

গাণিতিক দক্ষতা ও পারদর্শিতার সূচকসমূহ:
একজন ব্যক্তি গণিতে কতটা দক্ষ ও পারদর্শী তা নির্ণয়ের পাঁচটি সূচক রয়েছে:
ক. যে কোন গাণিতিক বিষয়বস্তু বুঝার ক্ষমতা(Conceptual Understanding): গাণিতিক বিষয়গুলো বোঝার ক্ষমতা বলতে বোঝায় ষিয়গুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন এবং গাণিতিক প্রক্রিয়াসমূহ কীভাবে কাজ করে তা বোঝার সক্ষমতা অর্জন করাই হচ্ছে যে কোন গাণিতিক বিষয়বস্তু বুঝার ক্ষমতা(Conceptual Understanding)
খ. তাড়াতাড়ি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারা(Procedural Fluency): গাণিতিক পদ্ধতিসমূজ সহজ সরল ও প্রাঞ্জলভাবে প্রয়োগ করার সক্ষমতা, প্রয়োগ কৌশলের সঠিকতা, নিপুনতা, নমনীয়তা, যথার্থতা, পারদর্শীতা, সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ ইত্যাদিই হচ্ছে তাড়াতাড়ি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারা(Procedural Fluency)।
গ. বিভিন্ন কৌশল ব্যবহারের যোগ্যতা(Strategic Competence): সূত্র গঠনের সক্ষমতা, সূত্র উপস্থাপনের যোগ্যতা এবং গাণিতিক সমস্যাসমূহ সমাধানের যথার্থ যোগ্যতা অর্জন করাই হচ্ছে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহারের যোগ্যতা(Strategic Competence)।
ঘ. নানাবিধ যুক্তি দিযে কারণ ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা(Adaptive Reasoning):যুক্তিমূলক চিন্তা করতে পারা, চিন্তার প্রতিফলন করতে পারা, ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা, যুক্তি দেখিয়ে কোন সমস্যা সমাধানের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারা ইত্যাদি হচ্ছে নানাবিধ যুক্তি দিযে কারণ ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা(Adaptive Reasoning)।
ঙ. সৃষ্টি বা উপস্থাপনগত বিভিন্নতা(Productive Disposition):
কোন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তার অভ্যাসগত জড়তা যেমন- “আমি কী এ সমস্যাটি সমাধান করতে পারব?” অথবা কোন একটি পদ্ধতির প্রতি দুর্বলতা(অতি পছন্দ) হবার কারণে সহজ ও বোঝার উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের স্বাতন্ত্র্যতা থাকতে পারে। গণিতকে নিজের একান্ত পছন্দের বিষয় হিসেবে চেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও স্বাতন্ত্র্য থাকবে। কিন্তু পরিশ্রম এবং সামর্থ্য্ যে পরিপূরক হিসেবে অবস্থান করে তা বোঝার যোগ্যতা হচ্ছে সৃষ্টি বা উপস্থাপনগত বিভিন্নতা(Productive Disposition)।
এ সূচকসমূহ যে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে চলে আসবে ব্যাপারটা আসলে এমন নয়। তবে যতটা যোগ্যতা যার মধ্যে সৃষ্টি করা যায় এবং যত তাড়াতাড়ি সৃষ্টি করা যায় তার প্রতি নজর রাখতে হবে।

সমস্যা সমাধানের অনুকূল পরিবেশ তৈরিকরণ:
শিক্ষক শিক্ষার্থীকে সমস্যার মূল বিষয়টি বুঝিয়ে দিবেন। শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে সমস্যা সমাধানে ব্রতী হবে। সমাধানের সঠিক পদ্ধতি বাছাই করবে, সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালাবে এবং ব্যর্থ হলে পুনরায় চেষ্টা চালাবে। কারণ সকল সমস্যার ধরণ ও কাঠিণ্যের মাত্রা এক নয়। আবার সকল সমস্যা সমস্যার সমাধান কৌশলও এক নয়। একটি সমাধান বের করার চেষ্টা সব সময় সহজ হয় না। কোন কোন সমস্যা সমাধানে অনেক সময় ব্যয় হতে পারে এবং শিক্ষার্থীর ধৈর্যচ্যূতিও ঘটতে পারে।এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক কৌশল পাল্টাবেন। শিক্ষার্থীরা “সমস্যা” সমাধানে নিজেদের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের পাশাপাশি প্রাপ্ত সমাধানের ব্যাখ্যা, ন্যায্যতা প্রতিপাদন  ও যথার্থতা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনে বিতর্কে অংশ গ্রহণ করবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামর্থের আলোকে নিজের অবস্থান গ্রহণ করবেন এবং সমস্যাগুলো নিয়ে বিতর্কের বা আলোচনার সময় নিয়ন্ত্রণ করবেন।

শ্রেণিকক্ষে সমস্যাকেন্দ্রক গণিত শিক্ষণ পদ্ধতির ধাপসমূহ:
সমস্যাকেন্দ্রক গণিত শিক্ষণ পদ্ধতি একটি কার্যক্রমভিত্তিক শিক্ষণ প্রক্রিয়া। এ জন্য পূর্বেই সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের মৌলিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে শির্ক্থীদের প্রাথমিক ধারণা তৈরি করা হয়।মূলত সমস্যায় প্রদত্ত উপাত্ত থেকে সমস্যা সমাধানের জন্য উপায় নির্ধারণ করা, সারনি তৈরিকরণ, তালিকা তৈরিকরণ, তথ্য বিশ্লেষণ, শিক্ষার্থীর পূর্বের জ্ঞানের সাথে সমন্বয় সাধন এবং এর আলোকে সমস্যা সমাধানের প্রকৃত ও যথার্থ প্রক্রিয়া খুঁজে বেরকরণ ইত্যাদি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে সমস্যাটি সমাধান করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্রেণ স্টর্মিং এর মাধ্যমে চিন্তন দক্ষতা, বিপরীতমূখী কাজ ও চিন্তন (backward work and thinking) পরিবেশ তৈরি করা হয়। সমস্যা উপস্থাপন পর্যায়ে শিক্ষার্থীর মাঝে প্রবল আগ্রহ জাগ্রত করা হয়। করণ শিখনের(Lerning by doing) এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী সক্রিয় থাকে বলে মনোযোগ হারায় না। শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

সমস্যাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়: ক) শিক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত সমস্যা  ও খ)শিক্ষার্থী কর্তৃক চিহ্নিত সমস্যা।

প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত সমস্যা নিয়ে কাজ শিক্ষার্থীরা কাজ করবে।কাজে প্রক্রিয়া ও ধাপসমূহ বুঝার পর শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সমস্যা চিহ্নিত করবে এবং তা সমাধানের জন্য যাবতীয় কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। শিক্ষক উভয় ক্ষেত্রে সহায়কের ভূমিকায় থাকবেন। তিনি সরাসরি কোন উত্তর বলে দেবেন না তবে গাইডিং প্রশ্ন করে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করবেন। প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন ধাপে সম্পন্ন হয়:
ধাপ-1: শিক্ষার্থীদের সামনে সমস্যাটি কৌতুহল উদ্দীপকভাবে তুলে ধরা।

ধাপ-2: শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে (প্রতি দলে3/4 জন) করে বিভক্ত হয়ে সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করবে এবং সমস্যাটি সমাধানের উপায় খুঁজে বের করবে। তারপর দলীয়ভাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। তাদের চিন্তার প্রক্রিয়াটি নিম্নোক্তভাবে অগ্রসর হবে:
  
সমস্যাটি থেকে আমরা কী কী জানতে পারি
এর সাথে সম্পর্কযুক্ত আর কী কী আমাদের জানা আছে

 আমাদের  কী কী  জানতে হবে

1.       
1.
1.
2.      
2.
2.
3.      
3.
3.
4.      
4.
4.

এ পর্যায়ে তারা সমস্যার আলোকে অনুকল্প বা অনুমিত সিদ্ধান্ত(hypothesis)গ্রহণ করে।

ধাপ-3: এ ধাপে শিক্ষার্থীরা অজানা তথ্যগুলোকে বের করার জন্য অনুসন্ধানমূলক কাজ করবে। প্রত্যেক ব্রেনে স্টর্মিং  এর মাধ্যমে চিন্তা করে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।

ধাপ-4: এ ধাপে শিক্ষার্থীরা যে তথ্যগুলো স্বতন্ত্রভাবে সংগ্রহ করেছে তা নিয়ে দলে আলোচনা করবে এবং দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
ধাপ-5: এ ধাপে সকল দল মিলে তাদের বের করা সমাধান প্রক্রিয়াগুলো পর্যালোচনা করবে এবং সম্মিলিত সিদ্ধান্তে  উপনীত হবে। অর্থাৎ তারা সমাধানের উপায় খুঁজে পাবে।

ধাপ-6: এ ধাপে শিক্ষার্থীরা আবার পূর্বের দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। সমস্যাটি দলীয়ভাবে সমাধান করবে। সমাধান তারা ল্যাপটপে বা পোস্টার পেপারে বা থাতায় বা মাটির মেঝেতে লিখবে।শিক্ষার্থীদের আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে লিখন উপকরণ নির্ধারিত হবে। 

ধাপ-7: এ ধাপে প্রত্যেক দল তাদের সমাধান প্রক্রিয়া শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর সম্মুখে উপস্থাপন করবে এবং শিক্ষার্থীরা যুক্তি তর্কের মাধ্যমে উত্তম উপায়টি নির্বাচন করবে।

ধাপ-8: সমস্যা সমাধানের পর শিক্ষক তার সমাপ্তি বক্তব্য ‍উপস্থাপন করবেন এবং অনুরূপ একটি সমস্যা বাড়ির কাজ হিসেবে শিক্ষার্থীদের দিতে পারেন।
নিচে একটি সমস্যা উদাহরণ হিসেবে সমাধানসহ দেওয়া হল:

সমস্যা: তোমাদের বিদ্যালয়ের সামনে একটি ফুলের বাগান তৈরি করার জন্য তোমাদের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য 96 বর্গ মিটার আয়তাকার জায়গা বরাদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে জায়গাটির মাপ তোমরা দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে পূর্ণর্সংখ্যার সাহার্যে সম্ভাব্য সব রকম উপায়ে নিতে পারবে।

সমাধান: শিক্ষক সমস্যাটি সমাধানের জন্য 4 জনের করে দল গঠন করবেন। দল নির্বাচন দৈবচয়িত নিয়মে অথবা নিয়ন্ত্রিত দৈবচয়িত নিয়মে হতে পারে। সূচনা পর্বে শিক্ষক সমস্যাটি শিক্ষার্থীদের বোধগম্য করে সহজ সরল ভাষায় ভালভাবে উপস্থাপন করবেন। এরপর দল গঠন করে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিবেন। প্রত্যেক দল সমস্যাটি নিয়ে তাদের নিজ নিজ দলে আলোচনা করবে এবং তথ্য ‍উপাত্তসমূহকে নিম্নোক্তভাবে বিন্যস্ত করবে:  

সমস্যাটি থেকে আমরা কী কী জানতে পারি
এর সাথে সম্পর্কযুক্ত আর কী কী আমাদের জানা আছে

 আমাদের  কী কী  জানতে হবে

1. বাগানটির ক্ষেত্রফল 120 বর্গমিটার।
1.  
1. প্রস্থ পূর্ণ সংখ্যায় সর্বনিম্ন কত হতে পারে?
2.বাগানটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ একাধিক উপায়ে নির্ণয় করতে হবে বা করা যাবে।
2. মিটারমিটার = বর্গমিটার

2.দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ কত হতে পারে?

3. দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অবশ্যই পূর্ন সংখ্যায় হতে হবে।
3.গুণনীয়কের সাহায্যে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়। 
3. প্রস্থগুলো কী কী হতে পারে?
4.সম্ভাব্য সব রকম উপায়ে বাগানটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ণয় করতে হবে।
4. সর্বোচ্চ গুণনীয়ক হবে প্রদত্ত সংখ্যার সমান।

4.দৈর্ঘ্যগুলো কী কী হতে পারে?

5. সর্বনিম্ন গুণনীয়ক হবে 1
5. দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের একক কী হবে?

সমস্যাটির সময় বিন্যাস নিম্নরূপ হবে:
1.   সমস্যা উপস্থাপন ও সূচনা পর্ব:- 10 মিনিট
2.  দলে আলোচন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ( কীভাবে সমস্যাটি সমাধান করবে তা ঠিক করা।): 30 মিনিট /40 মিনিটের ক্লাস হলে প্রথম দিন এ পর্যায়ে শেষ হবে। দলীয় নেতা দলের কাজগুলো সংরক্ষণ করবে।
3.   দলভিত্তিক আলোচনা ও সমস্যা সমাধানের পন্থা নির্ধারণ: প্রত্যেক দলকে উপস্থাপনের সুযোগ দিতে হবে। মোট 10টি গ্রুপ হলে প্রতি দলের জন্য 3 মিনিট সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে।পরবর্তী 10 মিনিট সম্মিলিত সিদ্ধান্তের জন্য নির্ধারিত থাকবে। দ্বিতীয় দিনের ক্লাস এভাবে শেষ হবে।
4.   তৃতীয় দিন প্রত্যেক দল স্বতন্ত্রভাবে কাজ করবে এবং সমস্যাটি সমাধান করবে। নির্ধারিত সময় সর্বোচ্চ 40 মিনিট।
5.  চতুর্থ দিন প্রত্যেক দল তাদের সমস্যার সমাধান উপস্থাপন করবে এবং প্রতি দলে 3 মিনিট করে উপস্থাপনের সময় দিতে হবে। পরবর্তী 5 মিনিট পর্যালোচনা ও শেষ 5 মিনিট শিক্ষকের সমাপ্তি বক্তব্যের জন্য নিধারণ করা যেতে পারে।
6.  পঞ্চম দিন প্রত্যেক দল সমস্যা সমাধানের জন্য প্রক্রিয়াটি রিপোর্ট আকারে লিখবে। রিপোর্টে বাস্তব জীবনের কোখায় কোথায় সমস্যাটির প্রয়োগ হতে পারে তা উল্লেখ থাকবে।
7.  ষষ্ঠ দিন শিক্ষার্থীরা বাগানের মডেল তৈরি করবে। অগ্রসর শিক্ষার্থীরা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করবে। উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপনের জন্য কাজ করতে পারে, মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা আর্ট পেপার কেটে মডেল বানাতে পারে। নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা মাটি বা পাতা বা অন্য কোন সহজলভ্য জিনিসের মডেল বানাতে পারে।
সময় বিন্যাসে নমনীয়তা থাকবে। যদি  নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হয়ে যায় তবে তারা পরবর্তী ধাপে কাজ করবে। এমনও হতে পারে যে দুই তিনটি ক্লাসেই সমস্যাটি সমাধান হয়ে যেতে পারে।শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, পারঙ্গমতা, চিন্তন দক্ষতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে সময়সীমা নির্ধারণ করাই যুক্তিযুক্ত। শিক্ষক পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করবেন। তবে ইউনিটভিত্তিক পাঠ পরিকল্পনা হলে উত্তম হয়।

শিখন অধিকতর স্থায়ী করার জন্য শিক্ষক নিম্নোক্ত সমস্যাটি দিতে পারেন:

শিখন স্থায়ীকরণের জন্য সমস্যা: উপরোক্ত সমস্যায় যদি সীমানা থেকে 1 মিটার এবং প্রতি চারার মাঝে দূরত্ব 1 মিটার রেখে চারা লাগায় তাহলে কোন সাইজের জমিটি সর্বোচ্চ সংখ্যক চারা লাগানোর জন্য  নির্বাচন করতে হবে ? এমন কোন সাইজ কী পাওয়া যাবে যেখানে প্রদত্ত শর্ত পূরণ করে একটি চারাও লাগানো যাবে না? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

পদ্ধতিটি আপাতত: দৃষ্টিতে সময় সাপেক্ষ ও কঠিন মনে হলেও বাস্তবে প্রয়োগ করলে দেখা যাবে যে কয়েকটি সমস্যা সমাধান করার পর খুব পরঙ্গমতা ও দ্রুততার সাথে গণিতের ধারণাগুলো শিক্ষার্থীরা হৃদয়ঙ্গম করছে। তখন সময়ও কম ব্যয় হবে। প্রচলিত পদ্ধতির বিদ্যালয় থেকে তারা জ্ঞানের দিক দিয়ে অনেক এগিয়েও থাকবে।  সর্বোপরি শিক্ষকের উদ্ভাবনমূলক চিন্তার পরিব্যপ্তি ঘটবে।   

সমস্যা সমাধানের পর্যায়ে শিক্ষকের করণীয়:
গণিত শ্রেণিকক্ষে কার্যকর গাণিতিক জ্ঞানের ভিত্তি রচনা করতে হলে আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে- আমরা যেভাবে শ্রেণিতে গণিত সম্প্রদায় গড়ে দুলছি তা ভবিষ্যতে গণিতজ্ঞ তৈরির জন্য যথার্থ ও যথেষ্ট কিনা। অন্য কথায় বলা যায় আমাদের প্রয়োগকৃত প্রক্রিয়াটি যথার্থভাবে শিক্ষার্থীদের মেধাকে কাজে লাগাতে সহায়তা করছে কিনা। Bruce(2007) উদঘাটন করেন যে, কার্যকর গণিত শিক্ষণ নিশ্চিত করতে হলে গণিত শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া() একটি অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য। তিনি লক্ষ করেন যে, শিক্ষর্থীদেরকে তাদের নিজেদের পদ্ধতিতে কাজ করতে না দিলে উচ্চতর গাণিতিক দক্ষতার মান নিশ্চিত করা যায় না। কেননা এটা না করলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগের মাত্রা তীব্রতর হয় না। তিনি শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক মিখস্ক্রিয়ার মাত্রা তীব্র করার জন্য পাঁচটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন:

ক. সমৃদ্ধ গাণিতিক কাজ ব্যবহার করা(The use of rich math tasks): একটি গাণিতিক কাজের যখন নানামূখী দিক থাকবে বা একাধিক সমাধান থাকবে তখন তা ব্যাখ্যা করার জন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে নানামূখী সুযোগ তৈরি হবে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের কাজকে যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করার (justify their reasoning)) সুযোগ পায়।

খ. সমাধানের যৌক্তিকতা প্রতিপাদন করা (Justification of solutions): শিক্ষার্থীদেরকে শুধুমাত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ করান জন্য কাজ না করে কার্যকর যুক্তি তর্ক(productive arguments), এবং যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য শ্রেণি আলোচনায় উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা অধিকতর বুঝার সক্ষমতা অর্জেনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সফল হতে পারে।

গ. শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী প্রশ্নোত্তর প্রক্রিয়া চালুকরণ(Students questioning one another):আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও দ্রুত কার্যকর প্রক্রিয়া হচ্ছে শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থীদের দ্রুততার সাথে উচ্চমানের প্রশ্ন করার কৌশল রপ্ত করানো। এ ক্ষেত্রে প্রম্পট কার্ডের মাধ্যমে কাজ করানো অধিকতর কার্যকর পদ্ধতি। একজন শিশু প্রম্পট কার্ডের মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারে ফলে প্রশ্নোত্তর পর্বে সময় অনেক কম লাগবে।যেমন: জ্যমিতির পাঠে শিশু প্রশ্ন করতে পারে- কী কী দিক দিয়ে বর্গ ও সামান্তরিক একই রকম?

ঘ. প্রয়োজনীয় সময় প্রদান করা( Use of wait time): যে সব প্রশ্নে উচ্চতর চিন্তনের প্রয়োজন হয় সে সব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে যাতে তারা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে।
ঙ. গাণিতিক আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় গাইড লাইন ব্যবহারকরণ(Use of guidelines for math task):  গাণিতিক আলোচনায় নিম্নোক্ত গাইড লাইনমূলক প্রশ্ন হতে পারে:-
ব্যাখ্যা করা: আমরা যা জানতে চাই তা হল…………..
একমত পোষণ করা: আমি কারণগুলোর সাথে একমত। কারণ…………..
 একমত পোষণ না করা: আমি কারণগুলোর সাথে একমত নই। কারণ…………..
গঠন করা: আমি যা গঠন করতে চাই তা হল………………..
বিপরীতমূখী চিন্তন: এ বিষয়ে চিন্তা করতে আমাকে যা সাহায্য করেছে তা হল……….. 


জিওবোর্ডের সাহায্যে জ্যামিত শিক্ষণ:
জিওবোর্ড হচ্চে জ্যামিতিক হিসাব নিকাশের একটি বিশেষ ধরনের আধুনিক যন্ত্র।। মিশরীয় গণিতবিদ ক্যালেব গ্যাটেগনো 1950 সালে সর্বপ্রথম এটি আবিস্কার করেন। এটি সাধারণত একটি কাঠের বা প্লাষ্টিক বোর্ডে অনেকগুলো পেরেক আটকানো যন্ত্র। এতে বিভিন্ন রঙের রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন আকারের ত্রিভুজ, চর্তুভুজ আয়ত, বর্গ সামান্তরিক, রম্বস বা বহুভুজ তৈরি করা যায়।এর ফলে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে বিভিন্ন আকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।সাধারণত 9, 16, 25, 35, 49,………. ইত্যাদি বর্গ সংখ্যক পেরেক দ্বারা এ বোর্ড সহজে তৈরি করা যায়। পেরেকগুলি সবদিকে সম-দূরত্বে বর্গাকারে অথবা ‍বৃত্তাকারে সাজানো থাকে। এ বোর্ড দ্বারা মূলত সমতলীয় আকৃতি, আকৃতির ঘূর্ণন, প্রতিচ্ছবি, সদৃশ্যতা, শ্রেণিকরণ, প্যাটার্ণ, সর্বসমতা, পরিসীমা, অথবা ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।     
220px-Geoboard              geoboard-complete1

bgybv wRI‡evW©-1:                                                                  bgybv wRI‡evW©-2:

No comments:

Post a Comment