Saturday, August 25, 2012


রহস্য কেন রহস্যময়

কোনভাবেই যেন আর হাঁটতে পারছে না হারু111টি তালি দেওয়া প্যান্ট আর 11টি জোড়া দেওয়া শার্টটা ভিজে কম করে হলেও 101 কেজি ওজন হবে বিশাল ওজন সে আর বয়ে বেড়াতে পারছে না তবু তার পথ চলা বন্ধ করার কোন উপায় নেই শ্রাবন ধারার বিরামহীনতার মাঝেই সে হেঁটে চলেছে হাঁটছে বললে ভুল হবে জ্বালানি শেষ হলে হঠাৎ করে গাড়ি যেমন তার পথ চলা থামাতে পারে না অনেকটা তেমনভাবেই সে চলছে অবশেষে অন্ধকার গলি পথটা কোন রকমে পার হয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল চোখের পাতা মুদে এল একি আশ্চর্য কথা! বন্ধ চোখেই হারু দেখতে পাচ্ছে! দেখছে লক্ষ কোটি আলোক বর্ণালী সে ভাবতে থাকে- এটা কীভাবে সম্ভব!! এতকাল শুনে এলাম বর্ণালী মোট সাতটা- “বেণীআসহকলা”- মত সাজানো থাকে তাহলে বাকীগুলো কোথা থেকে এল!......একটা বিশাল শূণ্যতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে হারুর মস্তিষ্কটা
কী খবর হারু? কী ভাবছো? হকিংসের প্রশ্নে চমকে উঠে হারু
আপনি হকিংস না?
হ্যাঁ
আপনি আবার কথা বলা শুরু করলেন কবে থেকে?
এইতো গতকাল 11টা 111 মিনিট থেকে
কী সব আবোল তাবোল বলছেন? 111 মিনিট আবার হয় কেমন করে?
হয় জগতে সবই হয় সবকিছুর উত্তর সবাই পায় না অথবা পেতে চেষ্টা করে না অথবা সঠিক পথে চেষ্টা করে নাযেমন ধর আমি জানি না আমার বউটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল কেন? ছেড়ে যাবেই যদি তবে আমাকে বিয়েই বা  করল কেন? বড় একা একা লাগছে আমার কেরানী আইনস্টাইন নাকি আমার চেয়ে বড় বিজ্ঞানী! আরে কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখলাম আমি আর বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব আমাকে লোকে এখনও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলো না! হায়রে বিচিত্র প্রাণিকূল! তার চেয়েও বিচিত্র আশরাফুল…. !
আপনি তো দেখছি মহা বোকা!
কেন আমি বোকা হব কেন?
 বোকা না হলে আপনি অনেক আগে থেকেই বুঝতে পারতেন- ফুল মানে তো বোকা
দূর কী সব বলছো? ওটাতো আরবী শব্দ! এর অর্থ ইংরেজিতে করব কেন?
আপনার নামের অর্থ জানেন?
জানি- ‍sport of hunting with hawk
এইতো ভুল জানেন দেখেই তো আপনাকে বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব থেকে ফিরে আসতে হয়েছে আর আপনার স্ত্রী আপনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন
তুমি জান?
অবশ্যই জানি- আপনার নামের অর্থ হক পাখির রাজা
এটা আবার কীভাবে হয়?
হয় আপনার বাবা আপনার নাম রেখেছেন- Hawk king ভুলে একটা k কম দিয়ে ফেলেছেন আর তাই আপনার নাম হয়ে গিয়েছে Hawking আর আইনস্টাইনের বাবাও একটা ভুল করেছেন তার নাম রেখেছেন আইনস্টাইল ভুলেএর স্থলেহয়ে গিয়েছে দেখে তাকেও 18 বছর পর্যন্ত বোকা থাকতে হয়েছে এবং কেরানীর চাকরি নিতে হয়েছে তার বুদ্ধি আপনার চেয়ে একটু বেশি ছিল বলে সে চাকরি এবং গবেষণা দুটোই এক সঙ্গে করে কিছুটা সফল হয়েছে
কিছুটা সফল হয়েছে বলছো কেন?
তিনিতো জানতেন না আলো(ফোটন কণা)- বেগের চেয়ে বেশি বেগের কোন কণা আছেযদি জানতেন তাহলে  E=m  সূত্রটি অবশ্যই দিতেন নাতাই তিনি কিছুটা সফল
কী বলছো? নামের সাথে কর্মের কী সম্পর্ক?
আছে আছেআগে বলুন  অপনি এখানে এলেন কীভাবে? আপনি তো দেখছি সেই ঐতিহাসিক চেয়ারে বসে বসে কথা বলছেন! বৃষ্টির পানি অপনার গায়ে লাগছে না কেন?
শুন হারু, এ সবকিছুকেই আমরা মিরাকল মনে করি। আসলে এ জগতে কারণ ছাড়া কিছুই ঘটে না। প্রতিটি কারণের আবার আছে লজিক টেবিল।ঐ লজিক টেবিল দেখলে সব কিছুই স্বচ্ছ হযে যাবে। পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে ধরা হয় থেলিসকে।তিনি বিশ্বাস করতেন মৌলিক পদার্থ মাত্র তিনটি: মাটি, বায়ু ও পানি।
সে যুগের সকল মানুষই তার এ কথা বিশ্বাস করত।প্রকৃতি জগতের রহস্য উদঘাটনে মানুষ অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এ যুগে থেলিসের তত্ত্ব অচল।নিউটন, আইনস্টাইন এখনও সচল। এক সময় আসবে যখন এরা সবাই অচল হয়ে যাবে।নিউটন, আইনস্টাইন ও হকিংসকে নিয়ে মানুষ হাসবে ঠিক থেলিসের অনেক কথাই নিয়েই যেমন আমরা হাসি।
কোন কখা?
এই যে ধর- গাছ মাটি খায়।
আপনি তো আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নি!
তোমাদের বাঙালিদের এটাই সমস্যা। একটা বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করে।
আপনার কথার যৌক্তিক প্রমাণ দেন তো?
ধরা যাক, তোমাদের মেয়েরা আযান হলে মাথায় কাপড় দেয়।যে মেয়ে জীবনে এক ওয়াক্ত নামাজও পড়েনি সেও আজানের সময় এটা করে।তোমাদের যে মেয়ের চালচলন হলিউড বা বলি্উডের নায়িকাদের মত সেও  বুকের ওড়নাটা টেনে মাথায় তুলে দেয়।
দেখুন হকিং সাহেব আমি বিজ্ঞানী হিসেবে আপনাকে শ্রদ্ধা করি। সে সুযোগে আপনি আমাদের জাতিসত্ত্বার উপর নিলর্জ্জ আঘাত হানছেন।এটা মেনে নেয়া যায় না।
আপনাদের মেয়েদের অবস্থা কী তার চেয়ে উন্নত? তারা কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের চেয়েও বেশি রক্ষণশীল। যেমন- আপনাদের কোন মেয়েকে মসজিদে যেতে দেখা যায় না। আমাদের মেয়েরা মসজিদে ঠিকমত না গেলেও পুজোর সময় মন্দিরে যায়, বড়দিনে গীর্জায় যায়। অবশ্যই আমাদের মেয়েরা এক্ষেত্রে অনেক বেশি উদার।ওয়ানগালা্ অনুষ্ঠানে যায়।
আরে বোকা নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে অন্যের সংস্কৃতি ধারণ করেছো বলেইতো তোমাদের এ অধপতন! ওয়ানগালার কথা বললে। গারোদের প্রায় সবাই এখন খ্রীষ্টান। তবুও তারা তাদের সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তোমরা মুসলমানরা কত বড় বোকা! তোমাদের সাথে ধোকাবাজি করে আমরা তোমাদের পুড়িয়ে মারলাম যে দিন সে আমরা এপ্রিল ফুল পালন করি। অথচ তোমরাও দিব্যি তোমাদেরকে পুড়িয়ে মারার এ আনন্দ উপভোগ কর!
আপনি আবার ধর্মে বিশ্বাস করেন নাকি?
বৈজ্ঞানিক যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া আমি কিছুই বিশ্বাস করি না। কিন্ত যেখানে যুক্তি দিয়ে রহস্য উদঘাটন করা যায় না সেখানে মনের অজান্তে একটা বিশ্বাসের জন্ম হয়। এ বিশ্বাসের পিছনে প্রথম দিকে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। একে বলে হাইপোথিসিস। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে হাইপোথিসিস বাস্তব ও যুক্তিযুক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়ায়।
যাক তোমাদের অন্ধ বিশ্বাসের খোঁড়া যুক্তির উপর ভর দিয়ে চলল আমরা খুব কমেই এগুতে পারতাম। আতাদের চাহিদার সংজ্ঞা আর তোমাদের চাহিদার সংজ্ঞা এক নয়। এগুলো অনেক সময় সাপেক্ষ ও যুক্তি পাল্টা যুক্তির ব্যাপার। আমাকে এখন যেতে হবে। এই মাত্র খবর পেলাম মঙ্গলের মাটিতে কিউরিসিটিতে একটা বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীরা এটার সমাধান করার চেষ্টা করছে। তারা সমাধান করতে না পারলে আমার স্মরণাপন্ন হতে পারে।
অনেক অনেক প্রশ্ন হারুর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না সে। এটা কীভাবে হল? ওটা কীভাবে হল? ………………
অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না হারু।হকিংস সাহেব ঠিকই বলেছেন বলে একবার ঠিক মনে হলেও আরেক বার তা সে মেনে নিতে পারছে না।আসলে আমরা জাতি হিসেবে বড়েই বিচিত্র। বিচিত্র আমাদের মানসিকতা।
সাড়ে তিন বছরের মাথায় যে জাতি জাতির পিতাকে হত্যা করল। একটা মানুষ পাওয়া গেল না কান্নাকাটি করার জন্য! বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবর্তনকারী জিয়াকে হত্যার পর তারাই কাঁদল অঝোর ধারায়। তারাই সাত্তারকে হটিয়ে এরশাদ শাহীকে ক্ষমতায় আনল। তারাই আবার স্বৈরাচার বলে তাকে হটিয়ে দিল। খালেদা হাসিনা শুধু পালা বদল করেই চলছে। পরিবর্তনের ডাক দিয়ে সেনা সমর্থিত সরকার দু’বছরের বেশি টিকতে পারল না। যে পাগলা ঘোড়ায় চড়েছিল তারা সে ঘোড়া তাদেরকে পঙ্গু করে ফেলে দিল।………………..
বৃষ্টির অঝোর ধারা বয়েই চলেছে। হারুর নাকের ডগায় জলকণা অবিরাম জমছে আর ঝরে পড়ছে।রাজপথে পাড়িগুলোর হর্ণ বাজানো কমে এসেছে। মাঝে মাঝে বর্ণিল আলোকচ্ছটা দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় দু’একটা রিকসার টুন টুন শব্দ শোনা যাচ্ছে। হিমশীতল শরীর মাঝে মাঝে মস্তিষ্কে এলার্ম বাজাচ্ছে। চোখ খুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করেও সে খুলতে পারল না। হা পাগুলো নাড়াতে গিয়ে কোন বোধ পেল না। ধমনী ও শিরাগুলো ঠিক মতো কাজ করছে না। হারু নিশ্চিত হল সে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যেতে চলেছে। মৃত্যু নিয়ে হারুর কোন ভয় নেই। কারণ সকলকেই একদিন মরতে হবে। কিন্তু এভাবে জনমানবহীন রাজপথে তাকে চিরবিদায় নিতে হবে তা কোনদিনই তার ভাবনায় ছিল না।এ সব ভাবতে ভাবতে তার শরীরটা নিস্তেজ হয়ে গেল।  (চলবে)

No comments:

Post a Comment